নিঃসন্দেহে আমার পড়া অন্যতম শ্রেষ্ঠ কিশোরসাহিত্য।
ক্রিকেট খেলতে গিয়ে দেরি করে বাড়ি ফিরে মায়ের বকুনি খাওয়া, কিংবা জামরুল পারতে গিয়ে কাঠপিঁপড়ের কামড় খাওয়ার মত ছোটবেলার বিভিন্ন স্মৃতির সাথে এই বইটা পড়ার সুখস্মৃতি এমনভাবে জড়িয়ে আছে যে আজ আর আমার ছোটবেলাকে এই বইটার থেকে আলাদা করে ভাবতে পারি না। টেনিদার সাথে আমার প্রথম পরিচয় কোন একটা ক্লাসে প্রথম হবার দৌলতে দিদার উপহার দেওয়া টেনিদা সমগ্রর মাধ্যমে।
আমি গ্রামের ছেলে, কিন্তু সত্যিকারের ভালো একটা কিশোরসাহিত্য যে গ্রাম-শহরের সঙ্কীর্ণ ভূগোলের সীমা হেলায় অতিক্রম করে যেতে পারে তার প্রমাণ দেয় এই বই: খাস কোলকাতা শহরের চার কিশোরের adventure (এবং, আর বেশি misadventure) গুলো থেকে মজা পেতে আমার কোন অসুবিধা হয় নি।
এই বইতে পাওয়া নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের অধিকাংশ গল্পগুলিই নির্ভেজাল হাসির, অনাবিল আনন্দের উৎস:
...টেনিদা তবু হাঁড়িটাকে ছাড়ে না। শেষকালে মুখের ওপর তুলে চোঁ করে রসটা পর্যন্ত নিকেশ করে দিলে। তারপর নাক-টাক কুঁচকে বললে, দুত্তোর, গোটাকয়েক ডেয়ো পিঁপড়েও খেয়ে ফেললুম রে! জ্যান্তও ছিল দু’-তিনটে! পেটের ভেতরে গিয়ে কামড়াবে না তো?
হাবুল বললে, কামড়াইতেও পারে।
কামড়াক গে, বয়ে গেল! একবার ভীমরুল-সুদ্ধ একটা জামরুল খেয়ে ফেলেছিলুম, তা সে-ই যখন কিছু করতে পারলে না, তখন ক’টা পিঁপড়েতে আর কী করবে!
তাই এই বই ক্লাসে প্রথম হবার দৌড়ে ক্লান্ত আজকের কিশোর-কিশোরীদের অবশ্যপাঠ্য। আর মজা ছাড়াও এই বই থেকে বাস্তব-জীবনে কাজে লাগানোর মত অনেক কিছু শেখা যায়। একটি নমুনা:
হুঁ, কবি হওয়া খুব খারাপ। আমার পিসতুতো ভাই ফুচুদা একবার কবি হয়েছিলো। দিনরাত কবিতা লিখত। একদিন রামধন ধোপার খাতায় কবিতা করে লিখল :তাই আর দেরি না করে বইটা পড়ে ফেলুন আর যদি পড়া হয়ে গিয়ে থাকে তো আরও একবার পড়ে নিন; প্রাণখোলা হাসি আপনাকে সুস্থ রাখবে।পাঁচখানা ধুতি, সাতখানা শাড়ি
এ-সব হিসেবে হইবে কিবা?
এ-জগতে জীব কত ব্যাথা পায়,
তাই ভাবি আমি রাত্রি-দিবা।
রামধনের ওই বৃদ্ধ গাধা
মনটি তাহার বড়ই সাদা-
সে-বেচারা তার পিঠেতে চাপায়ে
কত শাড়ি-ধুতি-প্যান্ট লইয়া যায়-
মনোদুখে খালি বোঝা টেনে ফেরে গাধা
একখানা ধুতি-প্যান্ট পরিতে না পায়!
…কিন্তু পিসিমা ধোপার হিসেবের খাতায় এইসব দেখে ভীষণ রেগে গেল! রেগে গিয়ে হাতের কাছে আর কিছু না পেয়ে একটা চালকুমড়ো নিয়ে ফুচুদাকে তাড়া করলে। ঠিক যেন গদা হাতে নিয়ে শাড়িপরা ভীম দৌড়চ্ছে।